ফেনীতে ’তোতাকাহিনী’ নাটক মঞ্চস্থ

author
0 minutes, 0 seconds Read

নিজস্ব প্রতিনিধি

ফেনীর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প অবলম্বনে ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর ইউসুফ হাসান অর্কের নাট্য রূপায়ণে নাটক তোতাকাহিনী।

তোতাকাহিনী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি ছোট গল্প । এই গল্পে তিনি তথাকথিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিদ্রুপ করেছেন, যে শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের সৃজনশীলতাকে নষ্ট করে, আমাদের শিশুদের বানিয়ে তোলে কর্পোরেট রোবট- যা এখনো প্রাসঙ্গিক।

তোতাকাহিনী নাটকে রাজ্যের এক পাখিকে শিক্ষা দেয়ার জন্য দায়িত্ব পড়ে রাজার ভাগিনা ও মন্ত্রীদের উপর। বিভিন্ন বিষয়ের পন্ডিতদের নিয়ে আসা হয়। পাখির এ শিক্ষায় যাতে ত্রুটি না থাকে সেজন্য নানা মস্ত বড় আয়োজন হতে থাকে। তৈরি করা হয় বিশাল খাঁচা। সব আয়োজন ঠিকঠাক চলতে থাকে। তোতা পাখিটাকে শেখানো হতে থাকে সব শিক্ষা। খাঁচার পাখিটা শিক্ষার চাপে দিনে দিনে আধমরা হতে থাকে। এক সময় প্রাণ হারিয়ে সবশেষ। এ যেন বর্তমানেরই এক প্রতিরূপ। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। বেড়ে যাচ্ছে শিক্ষার বিষয়াদি ও নানান পদ্ধতি। শিক্ষার নামে চাপিয়ে দেয়া এসব কর্পোরেট বোঝা শিক্ষার্থীদের নির্মল সুন্দর জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে তাদের সম্ভাবনাগুলোকে। এ নিয়েই ছিল নাটক ‘তোতাকাহিনী’।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফেনী শিল্পকলা একাডেমির নাটক বিভাগের প্রযোজনায় এস এম টি কামরান হাসান নির্দেশিত নাটকে অংশ নেন ২৭ জন মঞ্চকর্মী। এর নেপথ্যে কাজ করেছেন আরও ২১ জন।

অভিনয়ে ছিলেন, দোলন, নিতু, আকসা, নাহিদ, ইনান, নাহিনা, রাফি, মেহেদী, পাভেল, তৌহিদ, নিলয়, আরাফ, সুশান্ত, রিহান, প্রভাত, ইনান, সজল, টিটু, তাসলিমা, জাবেদ ও ফরহাদ। সংগীতে ছিলেন, শিলা, এমিল, শান্তা, পহেল, সজল, টিটু ও অমিত।

প্রযোজনা সমন্বয়কারী মোহাম্মদ মাহামুদুল হাসান চৌধুরী তাহমিদের সমন্বয় ও মোহাম্মদ শাহারিয়ার মজুমদার আরিফের আলোক পরিকল্পনা ও প্রক্ষেপণ নাটকটির মঞ্চায়নকে প্রাণবন্ত করে তোলে।

নাটকে ’রাজা’ চরিত্রের অভিনয় শিল্পী নাহিদ হাসান বলেন, ফেনীর সকল নাট্যকর্মী, সাংস্কৃতিকজন ও দর্শকদের ভালোবাসা ও সহযোগিতায় মুগ্ধ আমরা। সবাই পিন পতন নিরবতায় শেষ অবধি আমাদের শ্রম ও ঘামের ফসল নাটকটির মঞ্চায়ন উপভোগ করেছেন। সবাইকে নির্মল বিনোদন দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। আমরা বিশ্বাস করি সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রতিযোগিতা হবে সুস্থ এবং শিল্পের মধ্যে দিয়ে ঘটবে তার প্রকাশ।

নাটকের নির্দেশক ফেনী শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার এস এম টি কামরান হাসান বলেন, তোতা পাখির শিক্ষা ব্যবস্থার সমান্তরালে সমকালীন শিক্ষা ব্যবস্থার তুলনা করা হয়েছে নাটকটিতে। সুন্দর ও উন্নত সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষা ব্যবস্থার দূরদর্শী নীতি নির্ধারণ প্রয়োজনীয়তায় যেখানে নিজেকে চেনার ও প্রকৃতিকে জানার দ্বার উন্মোচিত থাকে এবং যেখানে মানুষ হবে মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন। নাটকের গল্পটিকে নান্দনিক পরিবেশন উপযোগী করে উপস্থাপন করাই ছিলো আমাদের লক্ষ্য। নাটকটিতে অভিনয়ের ক্ষেত্রে চরিত্রাভিনয় রীতি এবং পরিবেশনার ক্ষেত্রে সাজেস্টিভ রিয়েলস্টিক রীতি অনুসরণ করা হয়েছে।

ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাসুদুর রহমান বলেন, ভাবতেই অবাক হই। এক’শ বছরেরও বেশী সময় আগে বতর্মান শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে রবীন্দ্র নাথ গল্প লিখেছিলেন। কি পরিমান দুরর্শীতা থাকলে তিনি এমন গল্প লিখতে পারেন। নাট্য শিল্পীদের অভিনয় ছিল দুর্দান্ত। তারা গল্পটি তুলে ধরবার জন্য তাদের নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের ঘটতি ছিল না। মঞ্চে যত বেশী সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা হবে, তত বেশী আঁধার কাটবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *