উদ্বেগের আরেক নাম জিএসটি।

author
0 minutes, 1 second Read

নোবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু হয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হলেও এই পদ্ধতি এখন শিক্ষার্থীদের জন্য হতাশার কারণ। সেশনজটহীন ক্যাম্পাসগুলোও এখন তীব্র একাডেমিক সেশনজটের আশঙ্কায় রয়েছে।

গুচ্ছ পূর্ববর্তী সময়ে উৎসবমুখর পরিবেশেই আয়োজিত হতো নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ভর্তি প্রক্রিয়া। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে বছরের প্রথম সপ্তাহে ক্লাস শুরু করতো এই বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর প্রথম সেশনের ক্লাস শুরু হতে সময় নেয় অতিরিক্ত চার মাস। বর্তমানে ভর্তি পরীক্ষার ৬ মাস পরও ক্লাস শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে ৮ম মেধাতালিকা প্রকাশের পরও ২০০ এর অধিক আসন খালি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর জন্য এখন পর্যন্ত ৮ম মেরিট লিস্ট প্রকাশ করা হয়েছে। আসন বেশি ফাঁকা থাকায় গণ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তারপরও আসন পূরণ হচ্ছে না। সর্বশেষ মেরিট লিস্ট ডাকার পরও খালি থাকে ১৯৪টি আসন। এ ছাড়াও এখন পর্যন্ত কোটায় ভর্তির শূন্য আসন আছে ১০ টি। পরবর্তীতে আরো শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করে চলে যায়। শূন্য আসনের বিপরীতে আবারও শিক্ষার্থীদের ডাকা হবে।

জিএসটি ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমানোর পরিবর্তে ভোগান্তি আরো বাড়িয়েছে বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় বারবার আসা যাওয়া করতে হচ্ছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের। আব্দুল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থী জানান, ৬ মাস আগে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে এখনো আমরা ক্লাস শুরু করতে পারি নি। শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন উদাসীনতায় আমরা চরম হতাশ হয়ে পড়ছি। নাজমুন নাহার নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এমনিতেই করোনার কারণে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এখন এভাবে পড়ালেখা শুরু করার আগেই যদি আমরা সেশনজটে পড়ি তাহলে এর থেকে কিভাবে উঠে দাড়াবো? সরকারের উচিৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ায় বিশেষ নজর দেওয়া।

ভর্তি প্রক্রিয়ার এমন জটিলতার জন্য গুচ্ছ পদ্ধতিকে দায় দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সাথে সংশ্লিষ্টরা। নোবিপ্রবির গুচ্ছ টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশিকুর রাহমান খান বলেন, স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া চালানো এবং গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ার মাঝে অনেক ব্যবধান তৈরি হয়েছে। জিএসটি যেভাবে নিয়ম করে দেয় আমাদের সেইভাবেই কার্যক্রম চালাতে হয়। যার ফলে বর্তমানে অনেক জটিলতা তৈরী হয়েছে।

গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্র ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে একমত পোষণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর। তিনি বলেন, গুচ্ছতে ভর্তি প্রক্রিয়া হওয়ায় তীব্র ভোগান্তিতে আছে অপেক্ষমান শিক্ষার্থীরা। ভোগান্তি কমানোর জন্য চালু হওয়া পদ্ধতি এখন আমাদের জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার অর্ধবছর পার হলেও আমরা এখনো ২০২১-২২ সেশনের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে পারি নি।

গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হওয়ার বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম বলেন, আপাতত গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হওয়া পসিবল না। আমাদের রাষ্ট্রপতির অনেকদিনের আকাঙ্খা হচ্ছে এই গুচ্ছ পদ্ধতি। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় সেশনজটের প্রশ্নে নোবিপ্রবি উপাচার্য বলেন, জটিলতা তৈরী হয়েছে মূলত শিক্ষার্থীদের কারণেই। তারা অনেক জায়গায় মাইগ্রেশন অন করে রাখে। আবার আদালতে রিটও করেছে। সবমিলিয়ে শিক্ষার্থীদের কারণেই একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হতে এতো দেরি হচ্ছে।

সংসদে আইন পাশের মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া হয় স্বায়ত্তশাসন। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া প্রায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিতে পারছে না স্বাধীন সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য বলেন,  আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা থাকলেও সরকারের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে হয় এবং পাশাপাশি আইন মেনে চলতে হয়। আমরা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ২০২১-২২ সেশনের ক্লাস শুরু করবো বলে আশাবাদী।

গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হওয়ার বিষয়ে স্বায়ত্তশাসনের কথাই বললেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রশাসন বিভাগের সচিব ড. ফেরদৌস জামান। তিনি বলেন, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা আলাদা আইন আছে৷ সবাই নিজেদের মত করে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। এটা নির্ভর করবে স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপর। ইউজিসি থেকে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে জিএসটির অধীনে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। চাইলেই যে কেউ এই প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে হয়ে যেতে পারবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *